ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের মোঃ মোজাফর আলী হাওলাদার ৭৫ বয়সে ২০০০ সালে ইন্তেকাল করেন। ব্যক্তিগত জীবনে পারিবারিক কর্মজীবী ও মুসল্লি ছিলেন। ইন্তেকালের পরে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছিলো। ভাটারাকান্দা গ্রামটি বিষখালী নদী তীরবর্তি হওয়ায় ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যায় বসতভিটা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কবরটিও। ছোট ছেলে বাদল সেনা সদস্য হিসেবে কুয়েত মেডিকেলকোরে কর্মরত অবস্থায় একাধিকবার তার পিতাকে এবং কবর বিলীনের পথে বিষয়টি স্বপ্নে দেখেন। বড় ভাই (মরহুম মোজাফফরের বড় ছেলে) আবুল বাশার বাদশাকে বিষয়টি ফোনে জানান বাদল। সোমবার রাতে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পিতার কবর স্থানান্তর উদ্যেশ্যে পারিবারিক আলোচনা করা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে বাদশা ও স্থানীয় মুসল্লি সাইফুলকে নিয়ে কবরের কাছে যান। কবর খুড়তেই সাদা কাপড় দেখতে পেয়ে যত্নসহকারে খোড়া শুরু করে। একপর্যায়ে তারা অক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে বৈদারাপুর গ্রামের নতুনবাড়িতে নেয়া হয়। মরহুম মোজাফফরের বড় ছেলে আবুল বাশার বাদশা এভাবেই পিতার অক্ষত মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়টি বর্ণনা করেন।
এমন ঘটনা শুনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা আল্লাহর কুদরতের অলৌকিক বিষয়টি দেখার জন্য ভিড় করেন। শুধু এক এলাকাই না, আশপাশসহ বিভিন্ন দূর-দূরান্ত এলাকা থেকেও অনেকে আসেন এমন ঘটনা দেখতে ও শুনতে।
বাদশা আরো জানান, বাবা ব্যক্তিগত জীবনে মুসল্লি ছিলেন ও হাক্কানী একটি দরবারের মুরিদ ছিলেন। পারিবারিক কাজ করেই তিনি জীবীকা নির্বাহ করতেন। তবে তিনি অনেক পরহেজগার ও মুত্তাকি মানুষ ছিলেন। কবর খুড়ার ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, কবর খুড়তে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে সাদা কাপড় বের হয়ে আসে। এরপর আরো যত্নসহকারে খুড়ে অর্ধেক পরিমাণ পরিস্কার হলে ইতিমধ্যে আবহাওয়া খারাপ হয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। উপরে পলিথিন দিয়ে বাকিটা খুড়ে মৃতদেহ উপরে উঠালে বৃষ্টির পানি লেগে সাদা কাপড় ধূসর বর্ণের হয়ে যায়। কাপড়ের মধ্যে হাড় ও চামড়া আছে কিন্তু কোন মাংসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। প্রতিটি হাড়ের জোড়াও শক্ত রয়েছে, কোন জোড়া বিচ্ছিন্ন হয়নি বা ছুটেনি। ১০টার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ করে বৈদারাপুর গ্রামের নতুন বাড়িতে নেয়া হয়। বাড়ির সাথেই মায়ের (মরহুম মোজাফফরের স্ত্রী) কবরের পাশে আছর নামাজ শেষে তাকে পুনরায় দাফন করা হয়।
সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট একেএম জাকির হোসেন জানান, ভাটারাকান্দা গ্রামের মরহুম মোজাফফর আলীর মৃতদেহ ২০ বছর পরে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল-জানাজা দরকার নেই বিধায় মঙ্গলবার আছর নামাজ বাদ বৈদারাপুর গ্রামের নতুন বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতিব ও কুতুবনগর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নান জানান, আল্লাহ তার কুদরতের আরেকটি নির্দশন দেখিয়েছেন। হয়তো তিনি আল্লাহর একজন গ্রহণযোগ্য বান্দা ছিলেন।